কিন্তু শাহবাগে যে স্বতঃস্ফুর্ত গণজাগরণ হয়েছে তা তো কোনো দলের নয়, কোনো একটি পত্রিকার নয়; গোটা দেশের। সারা বিশ্বের সকল বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে শাহবাগের ডাক। মতি ভাই ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর গণআন্দোলনের মাঠের সৈনিক। কিন্তু ২০১৩-এর গণজাগরণে তাকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেখি নি। কেন? এমন তো নয় মতি ভাইয়ের অনেক বয়স হয়ে গেছে, কোথাও যান না। বরং পত্রিকার স্বার্থে অনেক অগুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানেও তাকে যেতে দেখি। মতি ভাইদের গণঅভ্যুত্থান অনেক মহৎ ছিল। গণঅভ্যুত্থানের বছর জন্ম বলে আমি অনেক গর্ব করি। কিন্তু তাই বলে আমাদের নতুন প্রজন্মের গণজাগরণের মহত্বও তো কম নয়, অন্তত মতি ভাইয়ের না যাওয়ার মতো অত খারাপ না। ... ...
নারীদিবসের গোলাপি শুভেচ্ছা, সুললিত শুভেচ্ছাবাণীতে ফেসবুক ভরপুর। গয়নার দোকানের বিজ্ঞাপন, দোকানে দোকানে নারীদিবসের ভর্তুকিতে দামি জিনিস পাওয়া যাচ্ছে, খুব আনন্দ করছে অনেকে, কেউ আবার বিরাগ পোষণ করছে, অনেক পুরুষরা লঘু রসিকতাও করছেন। আমার প্রতিনিয়ত মনে পড়ে দীর্ঘ কর্মজীবনে দেখা অন্তরালের বিজয়িনীদের কথা। তখন তো এত কিছু ছিলো না, থাকলে হয়তো কেউ তাঁদের সম্বর্ধনা দিতো। সে তো অন্যরকম সময় ছিল। দেশভাগের ক্ষত, মুক্তিযুদ্ধ, সপ্নদর্শী আত্মঘাতীর দল চারদিকে, ক্ষুৎকাতর সাহিত্য, সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য গোধূলি, ভালো কি মন্দ বোঝা যায়না। তারই মধ্যে মেয়েরা বেরিয়ে এসেছে সংসারের হাল ধরতে, সবার বাড়িতেই পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু আত্মীয়, দিশাহারা সময়। সেই অলাতচক্র ভেদ করেছেন যে সব মেয়েরা, যাঁরা করতে পারেননি, সবার কথাই মনে পড়ে, এইসব দিনে আরো বেশি। ... ...
বরাক উপত্যকার বুদ্ধিজীবীরা বিশেষ করে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা কিছুদিন আগে পর্যন্তও পশ্চিমবাংলাকে দেখিয়ে বড়াই করে বলতেন ‘বাঙালির মধ্যে জাতপাত নেই’। কীভাবে তাঁরা বুঝলেন যে সেখানে জাতপাতের বিভাজন নেই – কারণ বিহারে ভূমিহার-রাজপুত-ঠাকুর-দলিত-যাদব-কুর্মী ইত্যাদির মধ্যে সহিংস সংঘাত লেগেই থাকে, কিন্তু পশ্চিমবাংলায় অপার শান্তি। সেখানে যেমন রণবীর সেনা রয়েছে – তেমনি রয়েছে দলিত সেনা – পশ্চিমবাংলায় তো তেমন নেই। তাঁরা সম্পত্তি-সম্পর্ক বিচার করার দিকে না গিয়ে বহিরঙ্গের শান্তি-অশান্তির রূপ দিয়ে জাতপাতের বিচার করলেন। বিহারে উচ্চবর্ণের জমির মালিক সরাসরি জমির সাথে যুক্ত থেকে সস্তায় শ্রম শোষণকে সুনিশ্চিত করতে শারীরিক নিগ্রহ চালাত। দলিতরা তার প্রতিরোধ করলে কিংবা যে কোন শ্রেণি সংগ্রাম সেখানে শুরু থেকেই হিংসাত্মক রূপ নেয়। দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এই সম্পত্তি সম্পর্কের খানিকটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে – কিন্তু তা এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। পশ্চিমবাংলায় বর্ণহিন্দু আধিপত্য যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যেই বিরাজ করছিল তা এখন সবার কাছেই পরিষ্কার। সাচার প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার পর “পশ্চিমবাংলায় সাম্প্রদায়িকতা নেই” এই দাবিও যে ঠুনকো তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া গরীব মুসলমানদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার হিংসাত্মক রূপ পরিগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে না, কারণ বর্ণহিন্দু আধিপত্য যেখানে শান্তির বাতাবরণেই সবচাইতে সুরক্ষিত থাকে সেখানে অশান্তি ডেকে আনা আধিপত্যের পায়ে কুড়োল মারার সামিল। বরাক উপত্যকার ক্ষেত্রেও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাগত ভারসাম্যের চিত্রটি বাদ দিলে শান্তির এই একই যুক্তি ক্রিয়াশীল থাকে। ... ...
জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তাদের পরিবেশ জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সিকিমবাসী আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। পশ্চিম বাংলা, আসামেও বিভিন্ন রাজনৈতিক, পরিবেশবাদী সংগঠন ক্ষতিকর এসব বাঁধ এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালাচ্ছে। গনসংহতি আন্দোলন সহ বাংলাদেশের বাম মোর্চা গত ৮ থেকে ১০ এপ্রিল ২০১৪ তিস্তার পানির দাবিতে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট দোয়ানি পর্যন্ত রোড মার্চ করেছে। যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হল তিস্তা নিয়ে উদ্ভুত এই সমস্যা একা বাংলাদেশের মরুকরণ বা খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা নয়, কিংবা পশ্চিম বাংলার উন্নয়নের সমস্যা নয়। অথবা এককভাবে তা সিকিমের আদিবাসী, সাধারন মানুষদের জীবন, জীবিকা, ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব – বৈচিত্র্য রক্ষার সংগ্রামও হতে পারেনা। ক্ষতিগ্রস্ত আমরা সবাই। ফলে বাসযোগ্য পৃথিবী নির্মাণের এই সংগ্রাম সিকিম, পশ্চিম বাংলা, বাংলাদেশ সহ সকলের। ... ...
“মেয়ে প্রতিবাদ করো”, “মেয়ে তোমার শরীর ট্যাবু নয়”, “সাহস করে ঘুরে দাঁড়াও” এরকম অসংখ্য ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েরা। আর পাঁচ বছর আগেও এটা দেখা যেত না। সম্প্রতি বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইনে বিশেষ আইনে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। এতে নারীর উন্নতি আরও কয়েক ধাপ পিছিয়ে যাবে, সঙ্গে অল্প বয়সে মা হওয়া মেয়ের সংখ্যা বাড়বে। নারীর জরায়ু বরাবরের মতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই ফেস্টুনে ছিল এই নিয়েও প্রতিবাদ। আর পাঁচ বছর আগে একত্রে এত মেয়ে নিজের প্রতিবাদের কথা বলছে এটা ভাবা যেত না। তাই পত্রিকায় আসুক আর না আসুক, টিভিতে কেউ দেখুক না দেখুক, সেলিব্রেটি সমাগম হোক আর না হোক বাংলাদেশের প্রথম এই উইমেন মার্চ ইতিহাস হয়ে থাকবে। ... ...
যারা বোরো রাজনীতির হাল হকিকৎ সম্বন্ধ ওয়াকিবহাল আছেন তারা সবাই জানেন কী ভয়ানক রক্তক্ষয়ী ও হিংস্র ছিলো এই রাজনীতি। বহু মধ্যপন্থী বোরো নেতাকে সরাসরি মেরে ফেলা হয়। বোরোলিবারেশন টাইগার(বিটিএল), (যেটির নেতৃত্বে ছিলেন এই মোহিলারিই, পরে অব্শ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়ে দেন)। বা আগেকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ড(এন ডি এফ বি) - এই দুই দলের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে বহুজন হতাহত হন। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অবাধ জোগান এইসব আন্দোলনকে খুব সহজেই হিংসাত্মক করে তুলেছিল। এই হিংসা ও খুনোখুনির রাজনীতি বহুদিন ধরেই এই অঞ্চলে চলে আসছে, এমন নয় যে শুধু "অনুপ্রবেশকারী"দের সাথেই প্রথম এখানে হিংসার রাজনীতি পা রাখল। ... ...
৭১ এ যে নারীরা ধর্ষিত হয়েছিল তারা তো সম্মান হারায় নি বরং তারাই সম্মানিত, তারাই আমাদের গর্বের প্রতীক। তারা বীর। এই বীরদের ইজ্জৎ হারানো নারী উপস্থাপন করে তাদের কি অসম্মানিত করা হচ্ছে না? ইজ্জৎ তৈরি হয়, মেধায় শ্রমে, মানুষের কর্মে। শরীরে কিংবা মনে আঘাত লাগলে কারও ইজ্জৎ যায় না । বরং ইজ্জৎ যাবে আঘাতকারীর । তার জঘন্য কর্মের জন্য সে সমাজে বেইজ্জত হবে। তাই প্রতিটা পাকি ধর্ষকদের ইজ্জৎ গেছে। এইগুলাই ইজ্জৎ হারানো নষ্ট, ভ্রষ্ট অমানুষ। ... ...
২০০৫এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পুনর্বিন্যাস (Refreshers Course) পাঠক্রমে গিয়ে শেষ দিনে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হবার সৌভাগ্য হয়েছিল। সবাই জানেন, তিনি আজকাল মাতৃভাষা নিয়ে বেশ আবেগিক। ক্যালকাটার "কলকাতা' হবার পেছনে তাঁকে বেশ ঘাম ব্যয় করতে হয়েছে। বরাকের ১৯কে সে বাংলাতে জনপ্রিয়তার পেছনেও তাঁর এক বড় ভুমিকা আছে। বক্তৃতার এক জায়গাতে, তিনি আক্ষেপ করে বললেন, "গিয়ে দেখুন না এখন দার্জিলিঙে! ওখানে বাঙালি আর আগের মতো পাবনে না।' পরের বছর সত্যি সত্যি আমি সপরিবারে দার্জিলিঙ-গ্যাংটকে ঘুরতে গেছিলাম। গিয়ে দেখি, ওখানকার প্রায় সমস্ত বড় বড় হোটেল, রেঁস্তোরার, ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক এবং কর্মচারি, রেলের কর্মচারি সবাই বাঙালি। আমাদের গাড়িতে করে ঘুরিয়ে আনবার জন্যে যাদের ডাক পরেছিল তাদের মধ্যে কেউ শুধু ছিল ভুটিয়া কিম্বা নেপালি! সুনীলের কথা শুনে আমার মনে হছিল, আমি ব্রহ্মপত্র উপত্যকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বসে আছি। সেখানে বক্তব্য রাখছেন কোনো অসমিয়া বুদ্ধিজীবি। বলছেন, "গিয়ে দেখুন না বরাক উপত্যকাতে! ওখানে অসমিয়া আর আগের মতো পাবেন না। ওখানকার বেতারে বাজে কেবল বাংলাদেশের গান!' পাঠকের মনে পড়বে বিখ্যাত অসমিয়া বুদ্ধিজীবি ইসমাইল হোসেন চাকরি সূত্রে শিলচর থেকে গুয়াহাটি গিয়েই "সাদিনে' বেশ ক'টি সংখ্যাতে সেরকমই অনেক কথা লিখে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিলেন। বহু অসমিয়াও তখন তাঁর বিরুদ্ধে তখন কলম ধরেছিলেন। সুনীল ইংরেজির পক্ষেও বেশ কিছু সওয়াল করেছিলেন। আমি শুধু তখন প্রশ্ন করেছিলাম, ইংরেজির এই আধিপত্য অক্ষত রেখে কী বাংলার প্রচার প্রসার সম্ভব বলে তিনি মনে করেন? তিনি কী উত্তর দিতে পারেন, "দেশ' পত্রিকার পাঠকেরা তা ভালই জানেন। ... ...
১,১০০ জনে্র মৃত্যুর মিছিল, ধসে পড়া ভবনের ধ্বংস স্তুপের মধ্যে চাপা পড়া হাজার হাজার মানুষের বাঁচার হাহাকার, এরই মধ্যে নতুন দুটি প্রাণের জন্ম-মৃত্যু, হাজার নিখোঁজ আপন জনদের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি, টানা সাত-আট দিন ধরে জীবন মৃত্যুর মধ্যখানে পতিত এইসব মানুষের প্রাণ বাঁচাতে শত শত মানুষের প্রাণান্তকর লড়াই এবং শেষ পর্যন্ত আড়াই হাজার মানুষকে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করার মানবিক জয় বাংলাদশে এক দুঃসহ-মর্মান্তিক স্মৃতি হিসেবে জিয়ে থাকবে বহুদিন। ... ...
অনন্তর,পরিশেষে বলা জরুরি,ভৌগলিক অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দূর্ভাগ্য এই যে,বাংলাদেশের প্রতিবেশি রাষ্ট্রসমূহে সাম্প্রদায়িক সংকট যথেষ্ট প্রকট। অন্তত এই বিবেচনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো। কিন্তু এর অবনতি ঘটিয়ে যারা ফায়দা হাসিলে সচেষ্ট তারাই যে এই সাম্প্রদায়িক অপরাধটি সংঘটিত করেছে তা বুঝতে বাড়তি কোনো বিদ্যেবুদ্ধি কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবি হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। এটা সত্যি যে,রামুতে কতিপয় মুসলিম সন্ত্রাসির নেতৃত্বে যে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ও হামলা হয়েছে নোয়াখালির দাঙ্গার পর সন্দেহ নেই এটিই সবচে' বড় কলঙ্কজনক ঘটনা। ধর্মান্ধ মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে উস্কে দিয়ে সুকৌশলে যারা এই সাম্প্রদায়িক অপরাধ সংঘটনে পরিকল্পনা এবং ষড়যন্ত্র করেছে অবশ্যই তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইতোমধ্যে রামু নিয়েও শুরু হয়েছে পরস্পর দোষারোপের সেই নোংরা রাজনীতি। তবে কি অচিরেই আমরা রামুর এই সহিংস ঘটনাটিকেও বিস্মৃতির অতলেই হারিয়ে যেতে দেখবো? আর সেটি কি আদৌ আমাদের জন্যে মঙ্গলজনক হবে? আর কতকাল সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিশেবে বিবেচিত হবে? সাম্রাজ্যবাদের তল্পিবাহক রাজনীতিকরা স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধিতে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা কিংবা জংগিবাদের ধুয়ো তুলে খাল কেটে কি কুমিরকেই আমন্ত্রণ জানিয়ে যাবে? এদেশের অসাম্প্রদায়িক প্রকৃত মুসলিমদের কি কিছুই করণীয় নেই? তারা কি শুধুই হাত গুটিয়ে বসে বসে দেখবে আর ইসলামের মহত্বই প্রচার করে যাবে? একজন নির্যাতিত বাংলাদেশি বৌদ্ধের তুলনায় একজন নির্যাতিত রোহিঙ্গা কিংবা ফিলিস্তিনি মুসলিমের প্রতি এদেশীয় ধর্মপ্রাণ মানুষের মমতা কি আসলেই বেশি? হ্যাঁ,এইসব,সবকিছুই বিবেচনাপূর্বক রামু ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু সমাধানকল্পে একটি স্বচ্ছ বিচারবিভাগীয় তদন্ত এই মুহূর্তে সত্যিই ভীষণ জরুরি। তা না হলে যে সভ্যতার পোড়াঘ্রাণে বারম্বারই অসহ হয়ে উঠবে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তাই নয় কি? ... ...
বোড়ো ও মুসলিমরা ঐতিহাসিক ভাবে অসমিয়া সমাজের প্রান্তিক মানুষ। অথচ সমাজ ও মিডিয়ার একাংশ বাংলাদেশ থেকে 'অবৈধ' অনুপ্রবেশ কে একপার্শ্বিক ভাবে দায়ী করছেন, যেন এই একটি কারণ সমস্ত হিংসার মূলে। আমরা মনে করি, এই ধরনের সংঘর্ষের এরকম সরল ব্যখ্যা হয় না। জাতিবিদ্বেষের ফাঁদ থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখা এখন আমাদের সবার জন্য জরুরী। কিছু কায়েমী স্বার্থ সন্ধানী দল , এই হিংসা ও বিপর্যয়ের সময়টিকে বেছে নিয়েছেন, তাদের বহু পুরনো লক্ষ্য চরিতার্থ করতে। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বিতাড়নের দাবীটি সামনে আনাই তাদের উদ্দেশ্য। হিংসাত্মক কার্যকলাপ আর জীবনহানিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক অভিসন্ধি পূরণের এই চক্রান্তের আমরা কঠোর ভাষায় নিন্দা করি। আমাদের দাবীঃ ১) হিংসা, অগ্নি-সংযোগ ও হত্যা অবিলম্বে বন্ধ হোক। ২) আসাম সরকার, বিটিসি কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকার জীবন ও জীবিকার এই ক্ষতির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিক ও উৎখাত হওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। আমরা আবেদন করি ঃ ১) এই ধ্বংসলীলা রুখতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক। ২) শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় সংগঠনগুলি একটি মিলিত সমাধানের ডাক দিক। ৩) সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ক্রমাবনতি রুখতে , স্থানীয় ও জাতীয় মিডিয়া, দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিচয় দিক। ... ...